Posts

Showing posts with the label জীবন

কথার কথা - ১

Image
আমার জীবনে আবর্তিত হওয়া বিভিন্ন অভিজ্ঞতার আলোকে “কথার কথা” নামে বিভিন্ন কথা নিয়ে একটি ধারাবাহিক কথামালা রচনার উদ্যোগ নিয়েছি। নিম্নে তারই একটি তুলনামূলক নমুনা উল্লেখ করা হলো।   কথা - ১  “তুমি আইজ যত বড়-ই হও, যতই দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াও, যত টাকার মালিক-ই হও, ভুলে যাইয়ো না, এক কালে গ্রামে থাকতে, আমাদের ছাগল ভেড়া চড়াইচেও, আর শহরে থাকতে আমাদের বাজারের ব্যাগ টানিচেও।” - এ কথা তাচ্ছিল্যের, এ কথা অনাত্মীয়তার।   কথা - ২  “তুমি আজ যত বড়-ই হও, পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকো না কেন, একটা কথা মনে রেখো, আমাদের দোয়া এবং শুভ কামনা সব সময় তোমার সঙ্গে আছে, তুমি সব সময় সুন্দর এবং নিরাপদে থাকো এটাই আমাদের কামনা।” - এ কথা আন্তরিকতার, এ কথা আত্মীয়তার। পুনঃশ্চ, কথাগুলোর বক্তা কে ছিলো তা এখানে আলোচ্য বিষয নয়, কথাগুলোর মূল ভাবার্থ এখানে মূখ্য আলোচ্য বিষয়।

শৈশবের গল্প এবং মুক্তা ভাই

বর্ষাকাল। আমরা তখন গাড়াদহ গ্রামে থাকি, নতুন বাড়িতে। আমি তখন খুব ছোট, ছোট ওয়ানে পড়ি সম্ভবত। আমার চেয়ে বেশ কয়েক বছরের বড় এক ফুপাতো ভাই ছিলেন, নাম মুক্তা। তিনি তখন ক্লাস থ্রি কি ফোরে পড়েন। আমি এবং চাচাতো ভাই জুয়েল তার ভীষণ রকমের ভক্ত ছিলাম। তিনি নতুন কিছু কিনলেই সেটা আমাদের দেখাতেন এবং গল্প করতেন। একবার মুক্তা ভাই জিজ্ঞাসা করলেন, বলতো এক কলমে কয় শীষ? আমি বললাম এক কলমে এক শীষ। তিনি তখন বললেন এক কলমে দুই শিষ দেখেছিস কখনো? এক কলম দিয়ে দুই রঙের লেখা যায়, লাল এবং নীল। এই রকম কলম আমরা আগে কখনো দেখিনি, তাই বিষয়টা আমাদের অজানা ছিলো। আমি আর জুয়েল একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম, তাই কখনো হয় নাকি? আমাদের তিনি অবাক করে দিয়ে তার পকেট থেকে একটা কলম বের করলেন, যেটাতে দুই রঙের কালি ছিলো। তিনি আমাদের হাতে দাগ টেনে এক কলমে যে দুই রঙের লেখা যায় তার প্রমাণ দিলেন। তখন ইকোনো বলপেনের ব্যাপক প্রচলন ছিলো, মুক্তা ভাই দুইটা বলপেন বের করে বললেন, দুই কলম জোড়া লাগাতে পারবি? যমজ কলম বানাতে পারবি? ছোট মাথায় তখন অত কিছু খেলতো না। তাই বললাম সেটা কি করে সম্ভব? জুয়েল বলল কলম কখনো যমজ হয় নাকি

অনুকরণীয় অনুসরণীয়

সকলেই অনুকরণীয় হয় না।  মানুষ সবাইকে অনুকরণ বা অনুসরণ করে না। অনুকরণীয় বা অনুসরণীয় হবার মতো যোগ্যতা বা গুণাবলী রয়েছে মানুষ কেবল তাদেরকেই অনুসরণ করে।  বাল্যকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃজনশীল, শৈল্পিক গুণাবলী সমূহ আমাকে মুগ্ধ, অনুপ্রাণিত এবং প্রভাবিত করেছিল। শব্দে শব্দ গেঁথে কবিতা লিখতে শুরু করেছিলাম, কিছু গল্প লিখেছিলাম, যদিও এ সকলই বাল্যকালের কথা, পাণ্ডুলিপি গুলো হারিয়ে গেছে সেই কবে কালের স্রোতে।  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে আঁকা ছবি দেখে প্রথম উপলব্ধি করেছিলাম ছবি আঁকা খুব সোজা, ছবি আঁকায় ভুল বলে কিছু নাই।  তবে আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অনুকরণ বা অনুসরণ করিনি, আমি শুধু তার মতো সৃজনশীল গুণাবলী সমূহ আত্মস্থ করার চেষ্টা করেছিলাম যা আমায় মুগ্ধ করেছিল। আমিও ছবি আঁকি, আমিও কবিতা লিখি এর মানে আমি তাকে অনুকরণ বা অনুসরণ করি।  আমি নিশ্চিত বলতে পারি আমার মতো আরো অনেকেই আছে যারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃজনশীল গুণাবলীর দ্বারা প্রভাবিত।  আমার আঁকা ছবি, আমার কবিতা বা লেখা আমার ভাবনা আর চিন্তা চেতনা আমার মত করে আমার ভাষায় প্রকাশ করি এটাই আমার মৌলিকত্ব।  বাল্যকালে মোনালিসা পেইন্টিংটাকে একটা স্থির আলোকচিত

মুহূর্তের আলিঙ্গনে

বছর খানেকের তরে আমি ভুলে যেতে চাই, কে আমি, কোথায় ছিলাম, কোথায় এলাম, কি হারালাম, কি পেলাম, কোনটা নামি, কোনটা দামি।  উদাসীন আমি, ভাবনা ছিল কম জীবন, ভবিষৎ প্রসঙ্গে অল্পতেই ছিলাম তুষ্ট, সন্তুষ্ট। চলতাম সময় স্রোতে বেহুঁশে গা ভাসিয়ে।  ঋতুর পরে ঋতু এসে চলে গেছে, আমি থেকেছি সকল প্রহরে একই ঘরে, একই তরে, বেখেয়ালিতে। বিচ্ছিন্ন ছিলাম, ছিলাম বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। ছিলাম আমার পথে একা, অচেনা সে পথে বসন্ত দেয়নি দেখা। হিমেল হাওয়া দিয়েছে দোলা, নিযুত বছর ধরে যেভাবে দিয়ে চলেছে সবার চুলে, সবার গালে।  যে মুহূর্ত চলে গেছে সে তো আর আসবে না , হয়তো আসবে নতুন মুহূর্ত, হয়তো সেটি হবে উত্তম অথবা অন্য রকম। আমি প্রস্তুত নতুন মুহূর্তকে আলিঙ্গন করতে।

শৈশবের নীতি কথা

পরিশ্রমে ধন আনে পূন্যে আনে সুখ। আলস্য দারিদ্র্য আনে পাপে আনে দুঃখ। উপরের কথা গুলো আমার নয়, আমার নানী প্রায়ই কথা গুলো বলতেন এবং নানীর ঘরের দেয়ালে লিখে বাঁধানো ছিলো। কথা গুলোর রচয়িতা আমার অজ্ঞাত। তবে কথাগুলো যারই রচিত হোক না কেন, কথা গুলো সার্বজনীন অর্থবহ চিরন্তন সত্য কথা। আমার শৈশবে নানীর মুখে ছন্দময় আরো অনেক কথাই শুনেছি। তাঁর সকল কথার অর্থ আমি তখন বুঝতাম না তবে এখন সব কিছুই বুঝতে পারি। নানীর মুখে শোনা উপরের কথা গুলোকে আমি জীবন দর্শন মনে করি।

দূরত্ব

একটা সময় ছিল যখন পারস্যের কন্যার সাথে প্রণয় ছিল। যদিও দুজন ছিলাম দুই মহাদেশের বাসিন্দা, দূরত্বের কাছে মাথা নোয়াবার নই; এমনি ছিল মনোবল। একে অন্যের সাথে দেখা করার জন্য সকল বাঁধা পাহাড় পর্বত ডিঙিয়ে, দূরত্বকে পিছনে ফেলে নয়নে নয়ন মেলাতে বছরে দুই একবার পাড়ি জমাতাম দুই মহাদেশের মিলন স্থলে, তুরস্কে। দুজন একসাথে, আমার হাত তাঁর বগলে, একসাথে  ঘুরতাম - বেড়াতাম ইস্তানবুল, আন্তালিয়ার পথে প্রান্তরে, নীল আকাশের নিচে, সাগর তীরে, অরণ্যে - লোকালয়ে, রাস্তায় মানুষের ভিড়ে, পারস্য কন্যা আমার হাত ছাড়তোনা কখনোই। পাথরের আসনে দুজনে মুখোমুখি বসে জোস্না রাতে, হাতে হাত রেখে পূর্ণিমা দর্শন, জোস্নায় স্নান। ভূমধ্যসাগরের জল চিকচিক করতো চন্দ্র আলোয়, হাওয়ার আবেশে, দুইজন দর্শক আমি আর সে, অনুভূতিরা গভীর হতো রাতের সাথে। বিদায় বেলায় তাঁর মাথা আমার কাঁধে, ভিজতো গাল তাঁর নয়ন জলে তবু ঠোঁটে হাসি কথার ছলে, যেতে হবে ছেড়ে তবু মন বাঁধ সাধে, আমি সান্তনা দিতাম; আবার দেখা হবে বছর গড়ালে। হাওয়াই জাহাজ উড়াল দিতো, হয়ে যেত সে মেঘের আড়ালে, চোখের আড়ালে। বাড়ি ফিড়ে শুরু হতো আবার দুজনের দিন গোনা। দিন গুনতে গুনতে, একদিন দিন আবার আসতো ফিড়

আমিও যাবো

আমিও যাবো ।। আমিও যাবো চলে..... দূর অজানায় সেখানে মেঘেরা মেশে আকাশের নীল রঙে।। তুমি সাথে আসবে কি, আমার সাথে যাবে কি মেঘের ভেলায় করে যাবো নীল পাহাড়ে। আমার আগে গেছে সেথা আরো অনেকে। দিন শেষে খেলা ফেলে সকলেই যাবে চলে। হাসবো আমিও রাতের আকাশের তারা হয়ে। 

প্রেম ভাবনা

একটা সময় ছিলো যখন তোমায় আমি অনেক ভালোবেসে ছিলাম, দুচোখ বুজলে শুধু তোমার হাসি মুখ দেখতে পেতাম। আমার বর্তমান বা ভবিষ্যৎ সবখানেই আমি ফুলদানির মতো তোমাকে সাজাতাম। তোমার কথা ভাবতেই হৃদয় আমার শীতল হতো ভালোবাসার পবিত্র অনুভূতিতে। দিনরাত শুধু তোমার হাসি মুখ দেখতে ইচ্ছে করতো, ভালো লাগতো শুনতে তোমার কথা। তোমার প্রতি অনুভব করতাম হৃদয় ভরা ভালোবাসা। আমার সে ভালোবাসায় কোন খাদ ছিল না, ছিল পবিত্রতা, বিশুদ্ধতা। তখন আমার হৃদয় ভরা ভালোবাসা ছিল সত্যি, কিন্তু আমার পায়ের তলায় মাটি ছিল না, ছিলো না মাথা গোজার ঠাঁই, আমি ছিলাম ভিটেমাটিহীন যাযাবর। আচমকা একদিন, আবিষ্কার করেছিলাম, তুমি অন্য কারো। জানার পর কষ্ট পেয়েছিলাম, কিন্তু তোমাকে আমি দোষ দেয়নি কখনো, কারণ তোমাকে পাওয়ার মতো বাস্তবতা আমার ছিল না। আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে সান্তনা দিতাম, এই বলে - "তুমি ঠিকই করেছো, যে পৃথিবীতে আমার নিজেরই মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই, সে পৃথিবীতে তুমি এলে তোমায় রাখতাম কোথায়, বলো?" এরপর ধীরে ধীরে আমার কাদামাটির গড়া হৃদয় আগুনে পুড়ে শক্ত হয়ে যায়। পোড়ামাটির বাসন যেমন পানিতে ভিজিয়ে রাখলেও পূর্বের কাদা মাটির রূপে ফিরে আসে না, তেমনি চ

My thought - 3

Winter begins and ends, and begins Spring. Spring ends and begins Summer, Summer ends and begins Autumn. Everything has a beginning and an end, this is the eternal rule of the universe. Bangla: শীতের শুরু হয় এবং শেষ হয়, এবং বসন্তের শুরু হয়  বসন্ত শেষে গ্রীষ্মের শুরু, গ্রীষ্মের শেষে শরতের শুরু।  যার শুরু আছে তার শেষ আছে, এটি মহাবিশ্বের শাশ্বত নিয়ম।  Norwegian: Vinteren begynner og slutter, og begynner våren. Våren slutter og begynner sommer, sommeren slutter og begynner høsten. Alt har en begynnelse og en slutt, er dette den evige regelen i universet. - Arifur Rahman (03.01.2017)

My thought - 2

The ceiling depends on the wall wall is dependent on the ground. Everything in this world is sustained depends on something. Bangla: ছাউনি দেয়ালের উপর নির্ভরশীল  দেয়াল ভূমির উপর উপর নির্ভরশীল।  পৃথিবীর সবকিছুই কিছু না কিছুর উপর নির্ভর করে টিকে থাকে।  Norwegian: Taket er avhengig av veggen veggen er avhengig av bakken. Alt i denne verden er vedvarende avhenger noe. - Arifur Rahman (02.01.2017)

My thought - 1

Everything that happens, and everything we observe, all have one or more reasons, Back of all reasons have one or more main reasons. Bangla: যা কিছু ঘটে, এবং আমরা যা কিছু প্রত্যক্ষ করি, তার সব কিছুরই এক বা একাধিক কারণ রয়েছে।  আর সব কারণের পিছনে থাকে এক বা একাধিক মূল কারণ। Norwegian: Alt som skjer, og alt vi observerer, alt har en eller flere grunner, Til bak av alle grunner har en eller flere hovedårsak. - Arifur Rahman (01.01.2017)

প্রকৃতি ভ্রমণে একদিন

Image
তখন গ্রীষ্মকাল ছিল। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে মধ্য-দক্ষিণ নরওয়ের পর্বত ঘেরা প্রকৃতি ভ্রমণে গিয়েছিলাম আমার এক বন্ধুর নিমন্ত্রনে। সেদিনের শেষ বিকেলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিজেকে স্বর্গলোকে আবিষ্কার করেছিলাম এই দেখে যে, সেখানে সময় অসময়ে মেঘেরা আসে পর্বতকে আলিঙ্গন করতে। আমি মেঘের মাঝে হেটে ছিলাম পর্বতের গা বেয়ে। চারিদিকে ঝর্ণার কলকলে ধ্বনি, পাখিদের কিচিরমিচির আর ভূপৃষ্ঠের সবুজ লতা-গুল্মে পুষ্পরাজিরা মেতেছিলো আপন রূপ প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায়। সে এক অপরূপ দৃশ্য। নরওয়েজীয় বন্ধুর বাংলো থেকে গাড়ি চালিয়ে প্রায় এক ঘন্টার পথ পেরিয়ে আমরা গিয়েছিলাম মালভূমি পরিভ্রমনে। মালভূমির উপরেই রয়েছে এক পর্বতমালা। এই অঞ্চলটিকে ঘিরে একাধিক পৌরাণিক গল্পকাহিনী প্রচলিত আছে। এই স্থানকে নরওয়েজিয়ান ভাষা বলা হয় ''Jotunheimen'' বাংলায় ভাবার্থ দাঁড়ায় ''দৈত্যদের নিবাস''। ভূপৃষ্ঠে ছোট বড় অসংখ্য পাথর, পানির কলকল ধ্বনি শুনতে পাচ্ছিলাম, পর্বতের গা বেয়ে ছোট বড় অসংখ্য পানির ধারাও চোখে পড়ছিলো। কোথাও পানি জমে ছোট্ট ডোবা বা পুকুরের মত সৃষ্টি হয়েছে আর সেই পানিকে কেন্দ্র করে একধরণের পাখির আনাগোনা চোখে পড়ার

আমার সংগীত সাধনা - ২

Image
আমি তখন শাহজাদপুর সরকারি কলেজে স্নাতক অধ্যায়ন করছি। তখন প্রতিদিন সন্ধ্যায় ইটিভিতে ''বন্ধন'' নামে একটা ধারাবাহিক নাটক দেখাতো। পুরো নাটকটা  খুব কম-ই দেখা হতো, তবে অর্ণবের কণ্ঠে শীর্ষ সংগীত ''ব্যস্ত শহরে'' কখনোই দেখা বাদ দিতাম না, গানটা আমার ভীষণ প্রিয় ছিল শুধু এই কারণে দেখতাম প্রতিবার। শীর্ষ সংগীত শুনতে শুনতে একদিন আমার-ও গান গাইতে ইচ্ছে জাগলো মনে। টিভি পর্দায় চোখ রেখে অর্ণবের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে যেই না গাইতে শুরু করেছি, ''ব্যস্ত শহরে, ঠাস বুনোটের ভিড়ে, আজও কিছু মানুষ স্বপ্ন খুঁজে ফেরে। ব্যস্ত শহরে ....''  অমনি, পিছন থেকে এক অনুজা আমাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলো এই বলে, ''ব্যাস, অনেক হয়েছে, ভাঙা গলায় কুকুরের মত আর ঘেউ ঘেউ করতে হবে না, এবার থামো।'' সঙ্গে সঙ্গে আমি সম্বিৎ ফিরে পেলাম।  ধমকে ব্যবহৃত শব্দ সমূহ খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল।  অনুজা নিয়মিত সংগীত চর্চা করেন, ওস্তাদের কাছ থেকে রবীন্দ্র-নজরুল ও অন্যান্য সংগীতের বিষয়ে তালিম নিতেন। তাই হয়তো আমার কর্কশ কণ্ঠে গান গাওয়ার চেষ্টাকে তিনি গানের অপমান মনে করে কুকুরের ঘেউ ঘেউ এর সঙ্গে তুলন

আমার সংগীত সাধনা - ১

আমি তখন নবম-দশম শ্রেণীর ছাত্র। আমার এক অনুজা সংগীত চর্চা করতো, মূলত তাকে তালিম দিতেই বাড়িতে নিয়মিত গানের ওস্তাদ আসতো। মাঝে মধ্যে অনুজাকে সঙ্গে করে সংগীত বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতাম, তার গান শেখা অব্দি সেখানে বসে থাকতাম, গান শেখা শেষ হলে তাকে সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে আসতাম। গানের ওস্তাদকে সবাই মামা বলে সম্বোধন করতো তাই সকলের দেখাদেখি আমিও মামা বলে সম্বোধন করতাম। তিনি অনেক আন্তরিক ও স্নেহপরায়ণ মানুষ ছিলেন। অনুজা গানের তাল-লয়-রাগ থেকে শুরু করে রবীন্দ্র-নজরুল-আধুনিক গান শিখতো আর আমি পাশে বসে বসে সংগীত অনুরাগী শ্রোতার মতন একাগ্র চিত্তে শুনতাম। সংগীতের প্রতি আমার মনোযোগ দেখে একদিন গানের ওস্তাদ আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ''কি গান শিখবে?'' আমি মৃদু হেসে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়েছিলাম। হারমোনিয়ামে আঙ্গুল রেখে যেই সারেগামা শুরু করেছি অমনি পাশ থেকে একজন বলে উঠলো, এই কর্কশ কন্ঠীকে গান না শিখিয়ে ডুগি-তবলা বাঁজানো শেখান তাও একটা কাজের কাজ হবে, অন্তত (অনুজাকে ইঙ্গিত করে) ওর গানের সাথে বাঁজাতে পারবে। আশাহত আমি হারমোনিয়াম ছেড়ে ডুগি-তবলা বাঁজানো শেখা শুরু করলাম। খুব মনোযোগ দিয়ে শিখতে লাগলাম সে

একটু ফিরে দেখা

Image
আমি প্রথম কার্টুন একে পুরস্কার পাই ২০০৬ সালে টি আই বি আয়োজিত দুর্নীতি বিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতায়। তৃতীয় হয়েছিলাম খ বিভাগে। ২০০৭ সালে দ্যা ডেইলি স্টার আয়োজিত কার্টুন প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পাই। এরপর কার্টুন একে আমি অনেক কিছু পেয়েছি, আবার অনেক কিছু হারিয়েছি।  এমনকি কার্টুন একে ৬ মাস দুই দিন  জেল খেটেছি, মুরতাদ ফতোয়া পেয়েছি, দেশ ছেড়েছি সেই সাথে আরো অনেক কিছু পাওয়া বা হারানোর তালিকায় আছে। ২০০৭ সালের পর বাংলাদেশের কোনো পত্রিকা আমার কার্টুন ছাপত না, আবার কেউ ছাপলেও কার্টুনে আমার নাম সেন্সরড করা হত, আমার নামের স্থলে অন্য একটা নাম দিয়ে ছাপা হত। ২০০৮ সালে ২০ মার্চ হাইকোর্ট আমাকে মুক্তিদেন কিন্তু ,২০০৯ সালে যশোরের একটি নিম্ন আদালত আমাকে ওই একই কার্টুনের জন্য ২ মাসের সশ্রম কারাদন্ডে  দন্ডিত করে সেই সাথে পাঁচ শত টাকা জরিমানা করে। তো যাই হোক, আমি থামিনি থেমে থাকিনি, কারণ আমি হারতে শিখিনি। কার্টুন দিয়ে আমি বিশ্বের মাঝে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চাই, নিজের কথা নিজের নামে নিজের মত করে বলতে চাই।  এবং অন্য কার্টুনিস্টদের স্বাধীন মত প্রকাশের একটা জায়গা করে দিতে চাই। ২০০৯ সালে আমি একটা অনলাইন

বড় দিনের উপহার

এক প্রেমিক বালক তার প্রেমিকা বালিকাকে আমার আঁকা একটা ছবি বড় দিনের উপহার হিসাবে দিতে চান। আজ থেকে ১৩ দিন আগে নরওয়েজিয়ান কার্টুনিস্ট গ্যালারিতে এসে আমাকে খুঁজে গেছে, আমাকে না পায়ে গ্যালারির এক কর্মকর্তার কাছে তার এবং তাদের একটি জুগল ফটো রেখে গেছে সেই থাকে ১৫ হাজার বাংলাদেশী টাকার সমতুল্যের নরওয়েজিয়ান ক্রোনার আমার জন্য সম্মানী হিসাবে রেখে গেছেন। গ্যালারির কর্মকর্তা আমাকে ফোন করে প্রেমিক দ্বয়ের প্রতিকৃতি একে দেয়ার জন্য বলেছিলেন। আমার পরীক্ষা এবং আনুসঙ্গিক ব্যস্ততা থাকার কারণে বিষয়টা একরকম ভুলেই গেছিলাম। কাল সারা রাত জেগে পরীক্ষার উপকরণ প্রস্তুত করে আর সকাল ভোরে জমা দিয়ে বাসায় এসে যেই না ঘুমোতে গেছি। অমনি ফোন, ওপর প্রান্ত থেকে জিজ্ঞাসা করলো; প্রেমিক দ্বয়ের প্রতিকৃতির কি খবর? আঁকা হয়েছে? আমি হাই তুলতে তুলতে জবাব দিলাম, না এখনো শুরুই করি নাই, ভুলে গেছিলাম। তাই একটু ঘুমিয়ে মুখ হাত না ধুয়েই বসে পরলাম ড্রইং করতে। ড্রইং করতাছি আর ভাবতাছি, আহারে পিরীতি, ভীষণ পিরীতি।

নরওয়েতে পাঁচ বছর

Image
আমি নরওয়েতে অবস্থান করছি আজ পাঁচ বছর ও পাঁচ দিন। ২০১০ সালের ৩০ শে নভেম্বর সকাল ৬ টায় নরওয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলাম ঢাকা থেকে।  ঢাকা থেকে দুবাই, দুবাই থেকে ফ্রাঙ্কফুট এবং  ফ্রাঙ্কফুট থেকে নরওয়ে, সব মিলিয়ে প্রায় ১৮ ঘন্টার ভ্রমন। আর ১ লা ডিসেম্বর ছিল নরওয়েতে আমার প্রথম দিন। চারিদিকে প্রচুর তুষার, মাইনাস ২০ ডিগ্রী ঠান্ডা। সব কিছু তুষারে মোড়ানো রূপকথার রাজ্যের মত লাগছিল। প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতাম, কখনো বা পত্রিকা, রেডিও বা টিভিতে ইন্টারভিউ কখনো কখনো টিভিতে গিয়ে স্বশরীরে গিয়ে সংবাদের মাঝে সাক্ষাত্কার দিতে হয়েছে। বিষয় গুলো আমি খুব উপভোগ করেছি। ১ লা ডিসেম্বর এখানে পরিচিত হলাম স্থানীয় মেয়রের সাথে। মেয়রের নাম থোরে ভেস্তবি, খুব আন্তরিক একজন মানুষ। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি আমাকে দাপ্তরিক ভাবে অভ্যর্থনা জানালেন, মেয়রের সঙ্গে একটা পত্রিকায় একটা ইন্টারভিউ দিলাম এবং মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। মধ্যাহ্ন ভোজের সময় তিনি আমাকে জানালেন আগামী ২০ ডিসেম্বর ২০১০ নরওয়ের রাজা এবং রানী দ্রবাক শহর ভ্রমনে আসছেন। এই উপলক্ষ্যে তিনি বিশেষ কিছু কর

পাছে লোকে কিছু বলে তাই আমিও বলি

সেদিন এক শুভাকাংখী আমাকে অবহিত করলেন যে, অনেক বাংলাদেশীরাই আছেন যারা মনে করে থাকেন আমি নাকি নরওয়েতে এসে ট্যাক্সি চালিয়ে জীবন যাপন করে থাকি। প্রথম কথা: আমি মনে করি: ভিক্ষা, চুরি, ডাকাতি এবং ছিনতাই বাদে সৎ পথে অর্থ অর্জনের সকল পেশাই সম্মানের, সেটা যত ছোট কাজই হোক না কেন। দ্বিতীয় কথা: আমি বাইসাইকেল  চালানোটাও ঠিক মত জানি না। দেশে থাকতে আমার এক আত্মীয়ের বাইসাইকেল ধার করে চালানো শেখার চেষ্টা করেছিলাম বেশ কয়েকবার। শিখতে গিয়ে বেশ কয়েকটা ছোট খাটো দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিলাম। তাই সাইকেল চালানোর ইচ্ছেটা ছিকেয় তুলেছি বহু আগে। এখানে আসার পর আমার এখানকার কথিত নানা-নানী জন্মদিনের উপহার হিসাবে আমাকে একটা বাইসাইকেল কিনে দিয়েছিল সেই ২০১১ সালে। এরপর সাইকেলটাকে সেই যে গ্যারেজে বন্দী করেছি, এরপর আর সাইকেলটাকে নিয়ে কখনো বের হই নাই, চালাতে গিয়ে যদি কোনো দূর্ঘটনা ঘটে, এই ভয়ে। তৃতীয় কথা: আমার দেশের সমান্তরাল ভূমিতে দুই চাকার সাইকেল চালানোর অযোগ্য আমি, আর বিদেশের এই উচু নীচু ভূমিতে চার চাকার গাড়ি চালাতে গিয়ে যে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? তাই আমি মনের ভুলেও ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার কথা কখনো ভ

ঘুমে বিঘ্ন

যথারীতি আজ আমি বিলম্ব করে ঘুমোতে গিয়েছিলাম। ভোর পাঁচটার দিকে সম্ভবত। সকাল দশটার দিকে আচমকা কলিং বেল বেজে উঠলো। অসময়ে ঘুমে বিঘ্ন ঘটানোয় আমি কিঞ্চিত বিরক্ত। উল্লেখ্য আমার ঘরটা  দোতলায় অবস্থিত আর সদর দরজা নিচতলায়। তবে, কেউ কলিং বেল চাপলে আমাকে নীচতলায় না গেলেও চলে। কারণ- দোতলায় সুইচ লাগানো আছে, তাই আমি সুইচ চাপার সঙ্গে সঙ্গে নীচতলার সদর দরজা খুলে যায়। আর সুইচের পাশে একটা ফোন লাগানো আছে, যা দিয়ে দর্শন প্রাথীর সাথে যোগাযোগ করা যায়, তাই গেট না খুলে আগে জিজ্ঞাসা করলাম ''কে ?'' ওপাশ থেকে অজ্ঞাত এক নারী কন্ঠে জবাব এলো ''আমি একটা প্রচারনায় এসেছি, আপনার সাথে কথা বলতে চাই।'' আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ''কি বিষয়ে ?'' ওপাশ থেকে উত্তর এলো, ''আমি যিশু খ্রিস্টের বিষয়ে কথা বলতে চাই, আপনি কি যিশু খ্রিস্টের পৃথিবীতে আগমনের কারণ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ?'' আমি হাই তুলতে তুলতে জবাব দিলাম, ''জী না, ধন্যবাদ।'' বিছানায় ফিরে গেলাম, কিন্তু ঘুম ততক্ষণে বিদায় নিয়েছে। তাই কম্পিউটার নিয়ে বসে পরলাম।

আমার জীবনযাপন

আমার জীবনযাপন সাধারণত আর আর দশ জন মানুষের থেকে একটু আলাদা, বিশেষ করে আমার ছুটির দিন গুলোতে। কারণ- সবাই যখন ঘুমোয় আমি তখন জাগি, আর আমি যখন ঘুমোই সবাই তখন জাগে। এটা আমি আসলে ইচ্ছে করে যে করি তা কিন্তু নয়। এর কারণ- আমি এক সাথে একাধিক প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত, আর সেই কারণে আমাকে সব কিছুতেই সময় দিতে হয়। অনেকে মনে আমি শুধু কাটুন-ই আঁকি এর বাইরে আমি আর কোনো কাজ পারি না বা করি না এই ধারণা কিন্তু ঠিক না। আমি এখানকার বেশ কয়েকটা সংবাদপত্রে ফ্রিল্যান্স কার্টুনিস্ট হিসাবে কাজ করি, লেখাপড়া করি, একটা রাষ্ট্রীয় মন্ত্রণালয়ে বাংলা ভাষার শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত আছি, একটা প্রতিষ্ঠানের ওয়েব ডেভলপার হিসাবে কাজ করি, টুনস ম্যাগ নিয়ে সময় দিতে হয়। যেমন, টুনস ম্যাগের অন্যান্য কার্টুনিস্ট দের কার্টুন ছাপানো, তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। এছাড়া FnF.fm নামে আমার একটা রেডিও চ্যানেল আছে সেখানে অনেক সঙ্গীত শিল্পীরা গান পাঠায়, সেগুলো শুনে শুনে প্রচার যোগ্য গান গুলো প্রচার করতে হয়, তাদের সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। কাজের তালিকায় দিন দিন নতুন নতুন কাজ যোগ হচ্ছে। এরপর আমার একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে, সেখানে রান্নাবান্না, খাওয়া