Posts

আমার সংগীত সাধনা - ২

Image
আমি তখন শাহজাদপুর সরকারি কলেজে স্নাতক অধ্যায়ন করছি। তখন প্রতিদিন সন্ধ্যায় ইটিভিতে ''বন্ধন'' নামে একটা ধারাবাহিক নাটক দেখাতো। পুরো নাটকটা  খুব কম-ই দেখা হতো, তবে অর্ণবের কণ্ঠে শীর্ষ সংগীত ''ব্যস্ত শহরে'' কখনোই দেখা বাদ দিতাম না, গানটা আমার ভীষণ প্রিয় ছিল শুধু এই কারণে দেখতাম প্রতিবার। শীর্ষ সংগীত শুনতে শুনতে একদিন আমার-ও গান গাইতে ইচ্ছে জাগলো মনে। টিভি পর্দায় চোখ রেখে অর্ণবের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে যেই না গাইতে শুরু করেছি, ''ব্যস্ত শহরে, ঠাস বুনোটের ভিড়ে, আজও কিছু মানুষ স্বপ্ন খুঁজে ফেরে। ব্যস্ত শহরে ....''  অমনি, পিছন থেকে এক অনুজা আমাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলো এই বলে, ''ব্যাস, অনেক হয়েছে, ভাঙা গলায় কুকুরের মত আর ঘেউ ঘেউ করতে হবে না, এবার থামো।'' সঙ্গে সঙ্গে আমি সম্বিৎ ফিরে পেলাম।  ধমকে ব্যবহৃত শব্দ সমূহ খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল।  অনুজা নিয়মিত সংগীত চর্চা করেন, ওস্তাদের কাছ থেকে রবীন্দ্র-নজরুল ও অন্যান্য সংগীতের বিষয়ে তালিম নিতেন। তাই হয়তো আমার কর্কশ কণ্ঠে গান গাওয়ার চেষ্টাকে তিনি গানের অপমান মনে করে কুকুরের ঘেউ ঘেউ এর সঙ্গে তুলন

আমার সংগীত সাধনা - ১

আমি তখন নবম-দশম শ্রেণীর ছাত্র। আমার এক অনুজা সংগীত চর্চা করতো, মূলত তাকে তালিম দিতেই বাড়িতে নিয়মিত গানের ওস্তাদ আসতো। মাঝে মধ্যে অনুজাকে সঙ্গে করে সংগীত বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতাম, তার গান শেখা অব্দি সেখানে বসে থাকতাম, গান শেখা শেষ হলে তাকে সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে আসতাম। গানের ওস্তাদকে সবাই মামা বলে সম্বোধন করতো তাই সকলের দেখাদেখি আমিও মামা বলে সম্বোধন করতাম। তিনি অনেক আন্তরিক ও স্নেহপরায়ণ মানুষ ছিলেন। অনুজা গানের তাল-লয়-রাগ থেকে শুরু করে রবীন্দ্র-নজরুল-আধুনিক গান শিখতো আর আমি পাশে বসে বসে সংগীত অনুরাগী শ্রোতার মতন একাগ্র চিত্তে শুনতাম। সংগীতের প্রতি আমার মনোযোগ দেখে একদিন গানের ওস্তাদ আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ''কি গান শিখবে?'' আমি মৃদু হেসে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়েছিলাম। হারমোনিয়ামে আঙ্গুল রেখে যেই সারেগামা শুরু করেছি অমনি পাশ থেকে একজন বলে উঠলো, এই কর্কশ কন্ঠীকে গান না শিখিয়ে ডুগি-তবলা বাঁজানো শেখান তাও একটা কাজের কাজ হবে, অন্তত (অনুজাকে ইঙ্গিত করে) ওর গানের সাথে বাঁজাতে পারবে। আশাহত আমি হারমোনিয়াম ছেড়ে ডুগি-তবলা বাঁজানো শেখা শুরু করলাম। খুব মনোযোগ দিয়ে শিখতে লাগলাম সে

চড়ুই চলচ্চিত্র

Image
গত পরশু দিন বিকেলে আমি আর আমার এক প্রবীণ বন্ধু শহরের সৌন্দর্য দর্শনের জন্য আলোকচিত্রগ্রহণযন্ত্র সঙ্গে নিয়ে বের হয়েছিলাম। ঘন্টা খানেক হাঁটার পর প্রবীণ বন্ধটি আমাকে মধ্যাহ্ন ভোজের আমন্ত্রণ জানালেন। পথের পাশেই দেখতে পেলাম একটি রেস্তোরাঁ সামনে ছোট্ট একটি বাগান। বাগানটিও রেস্তোরাঁর অংশ, বাগানের চারপাশে ফুল ও সবজির গাছ ভেতরে কিছু সারণী ও কেদারা সাজানো আছে। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম কিছু চড়ুই পাখি আনাগোনা করছে। আমার সঙ্গে থাকা  আলোকচিত্রগ্রহণযন্ত্র দিয়ে চিত্র ধারণ করতে লাগলাম আর খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। রেস্তোরাঁর পরিবেশক খাবার দিয়ে যাওয়া মাত্রই বনরুটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে চড়ুই গুলোকে খাওয়াতে লাগলাম আর চিত্র ধারণ করলাম। অনেকদিন চলচ্চিত্র সম্পাদনার কাজ করা হয়না তাই ভাবলাম পরশুদিনের ধারণ করা চলচ্চিত্র অংশ সম্পাদনা করে কিছু একটা করা উচিত। তাই আজ  সারা সন্ধ্যা বসে বসে পনেরো মিনিটের খসড়া চলচ্চিত্র কে কেঁটে-ছেঁটে তিন মিনিটের চূড়ান্ত চলচ্চিত্রে রূপ দিলাম। চলচ্চিত্রের রং সংশোধন করার সাথে সামান্য একটু দৃশ্যমান প্রভাবও প্রয়োগ করেছি। পুনশ্চ: চেষ্টা করে যাচ্ছি আমার লেখায় শত ভাগ বাংলা শব্দের ব্য

আমার আন্তঃজাল বেতার

Image
২০১১ সালে একবার খুব ইচ্ছে হলো আন্তঃজাল ভিত্তিক একটি বেতার মাধ্যম চালু করার। সেই বছরেই জুলাই মাসের মাঝামাঝি আন্তঃজাল বেতার চালুও করেছিলাম। প্রথম দিকে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতাম আমার নিজস্ব পরিগণক থেকে, আর অনুষ্ঠান হিসেবে যা প্রচার করতাম তা ছিল আমার পছন্দের গান। পরিগণকটি প্রায়শঃ যান্ত্রিকত্রুটির কারণে সংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যেতো আর এই কারণে সম্প্রচারেও প্রায়ই বিঘ্ন ঘটতো। এরপর বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ভেবে-চিন্তে স্থায়ী সমাধান বের করি এবং ফরাসি থেকে মেঘ ঊর্ণ গুদাম ক্রয় করি। সেই থেকে আমার আন্তঃজাল বেতার নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে একযোগে অনুষ্ঠান প্রচার করে আসছে। এরপর শ্রোতাপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে ২০১৪ সালে নতুন নামে এবং নতুন ভাবে কার্যক্রম চালু, ইংরেজি ও বাংলা দুটি পৃথক মাধ্যমেও অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করি। বর্তমানে ১৫০টির ও বেশি দেশ থেকে মানুষ আমার আন্তঃজাল বেতার শুনে থাকে। গত জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি বার এবং নিম্নদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে শোনা হয়েছে  FnF.FM ইংরেজি মাধ্যমটি। অন্যদিকে FnF.FM বাংলা বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি বার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি সম

গ্রীষ্মকালীন গৃহউৎসব

প্রতিবছর স্থানীয় নরয়েজিয়দের গ্রীষ্ম, শীত, শরৎ ও বসন্তকালীন বিভিন্ন উৎসবে আমি আমন্ত্রণ পেয়ে থাকি। এবং তাদের সাথে উৎসব উজ্জাপনও করে থাকি।  গতকালকে, একটি নরওয়েজীয় পরিবার ও তাদের বন্ধু-বান্ধবের সাথে গ্রীষ্মকালীন গৃহউৎসব উৎযাপনের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। বিকেল পাঁচটায় নিমন্ত্রণকারী গাড়ি নিয়ে এসেছিল আমাকে বাসা থেকে নিতে। উৎসবে পানাহার এর সাথে সাথে আমরা মেতে ছিলাম বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ আলোচনায়।  উক্ত অনুষ্ঠানে যে সকল পুরুষগণ এসেছিলো, একমাত্র আমার বাদের সকলের স্ত্রী থাই বংশোদ্ভূত। থাইদেশের লোকজনদের সাথে কথা বলে আমি যেটা বুঝি, তা হল তাঁরাও বাঙালিদের মত আন্তরিক, অতিথি পরায়ণ এবং মিশুক।  আগত পুরুষগণের মধ্যে এক ষাট ঊর্দ্ধ প্রবীণ লোক ছিলেন যিনি চার বছর আগে আমার প্রতিবেশী ছিলেন এবং তিন বছর হলো থাইদেশ থেকে এক যুবতী মহিলাকে বিয়ে করে নরওয়েতে এনেছেন। সাবেক প্রতিবেশীর সাথে করমর্দন করার পর তিনি তার নতুন স্ত্রীর সাথে যখন পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন তখন তার স্ত্রী জানালেন যে, তিনি আমাকে চেনেন।  নতুন স্ত্রীর মুখে আমার সম্পর্কে শোনার পর প্রবীণ লোকটি কৌতূহলী হয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন, ''এনার সাথে তো তোম

বাংলাদেশি চিংড়ি

Image
আমি প্রায়ই বাজার থেকে প্যাকেটজাত চিংড়ি মাছ কিনতাম। কিন্তু ঠিক কখনোই বুঝতে পারিনি মাছ গুলো কোন দেশি। সেদিন রান্না করার পর নরওয়েজিয়ান এক অতিথি এসেছিলো। তিনি খেতে খেতে বললেন এই চিংড়ি মাছ গুলো নরওয়েজিয়ান চিংড়ি  মাছ থেকে ভিন্ন, কোথা থেকে কিনেছো,  এ গুলো কোন দেশি?  প্যাকেট হাতে নিয়ে হাতড়াতে হাতড়াতে দেখতে পেলাম এক জায়গায় ডাচ ভাষায় লেখা আছে ''Product uit Bangladesh'' অর্থাৎ বাংলাদেশের পণ্য। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশি হিসেবে গর্বে বুকটা ভরে উঠলো।  হতচকিত আমি সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছল কণ্ঠে অতিথিকে জবাব দিলাম, কোন দেশি মানে? এটা তো আমার দেশের চিংড়ি, বাংলাদেশি চিংড়ি।  অতিথির পাতে আরো কিছু চিংড়ি তুলে দিয়ে বললাম, খান, মজা করে খান। অতিথি মজা করে খেতে লাগলো।  খাওয়া দাওয়া শেষে অতিথিকে ঐ চিংড়ির দোকানের ঠিকানা জানিয়ে বললাম বাংলাদেশি চিংড়ি লাগলে ঐ দোকান থেকে কিনে নিবেন। আর সবাইকে বলবেন বাংলাদেশি চিংড়ি অনেক সুস্বাদু।    আমার দেশের পণ্য সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে যাক বিশ্বময় আর অর্থনীতিতে স্বাবলম্বী হোক আমার মাতৃভূমি। 

আমার দুইটি কথা - ২

গতরাতে দেখলাম আরব দেশ থেকে কিছু জঙ্গি বাংলা ভাষায় আমাদের হুমকি দিয়ে ভিডিও বার্তা ছেড়েছে আর কেউ কেউ কোনো কিছু না ভেবেই হুজুকে সর্বসমক্ষে শেয়ার করে যাচ্ছে।  আমরা বাঙালিরা যে হুজুকে  বাঙালি সেটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না এর প্রমান আমরা বহুবার দিয়েছি অতীতে।  সর্বসমক্ষে ভিডিওটা শেয়ার করায় লাভটা কার হচ্ছে? ১. জঙ্গিরা ভিডিও বার্তা ছেড়েছে আর আপনি (তাদের হয়ে) তাদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন সবার কাছে।   ২. সর্বসমক্ষে শেয়ারের মাধ্যমে আপনি কিন্তু জঙ্গিদের প্রচারক হিসেবে কাজ করছেন, আর আপনার কারণেই জঙ্গিরা সর্বব্যাপী প্রচারণা ও পরিচিতি পাচ্ছে। মনে রাখবেন প্রচারেই কিন্তু প্রসার। ৩. আপনার প্রচার করা ঐ জঙ্গি সংগঠনের সন্ত্রাসী নীতি আদর্শের বাণী কারো কারো মনে ভয়ের সৃষ্টি করছে। আর জঙ্গিরা কিন্তু এটাই চায়।    তাই অনুগ্রহ করে জঙ্গিদের হুমকি বার্তা সর্বসমক্ষে প্রচার করা থেকে বিরত থাকুন।   আসুন দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে নিজ দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেই। আর বেশি বেশি করে প্রচার করি আমরা বাঙালিরা বীরের জাতি, আমরা সন্ত্রাসের নিকট মাথা নত করি না। যে কোনো মুহূর্তে সন্ত্রাস কে মোকাবেলা কর