পুরাণ কথা - ২

শৈশবে গ্রামে থাকতে জোছনা রাতে নানার বাড়ির উঠোনে খেজুর পাতার পাটিতে শুয়ে শুয়ে নানীদের কাছ থেকে বিভিন্ন পৌরাণিক গল্প, রূপকথা, উপকথা, বাংলার লোকজ গল্প শুনতাম, যা আমাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করতো। একই গল্প  প্রায় প্রতিদিনই শুনতাম তবুও সেগুলোকে কখনোই পুরাতন মনে হতো না, যতই শুনতাম ততই ভালো লাগতো। এই গল্পগুলোই ছিল সেই সময়ের বিনোদনের একমাত্র উৎস।

এরপর শহরে আসার পর মামার টেলিভিশনের কল্যানে ভারতীয় টিভি চ্যানেলে রামায়ণ এবং মহাভারত নামক সিরিয়াল দেখার মাধ্যমে রামায়ণ এবং মহাভারত নামক পৌরাণিক কাহিনী দুটির সাথে পরিচিতি লাভ করি।
ক্লাসের বন্ধুদের মুখেও ভারতীয় পুরাণের অনেক গল্পই শুনেছি।  এছাড়া আমার বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের বাড়িতে পৌষ-পার্বণে পারিবারিক ও ধর্মীয় উৎসবে কীর্তন শুনতাম। সেখান থেকেও অনেক পৌরাণিক কাহিনীর সাথে পরিচিত হই। এভাবেই পুরাণিক গল্প কাহিনী শৈশবে আমার মনে স্থান করে নিয়েছিল।

এর পর ইউরোপে আসার পর গ্রিক ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান পৌরাণিক গল্প কাহিনীর সাথে পরিচিতি ঘটে। এদের পৌরাণিক গল্পকাহিনী ভারতীয় গল্পকাহিনী থেকে ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও কিছু কিছু চরিত্রে ও ঘটনায় কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়, হতেও পারে এই সাদৃশ্য কাকতালীয়।

ইউরোপের লোকজন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান বা গ্রিক পুরাণের গল্প ও চরিত্রের সাথে যেভাবে পরিচিত ভারতীয় পুরাণের গল্প ও চরিত্রের সাথে তারা সেভাবে ততটা পরিচিত নন। এর কারণ হতে পারে ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনী গুলো এখানে সেভাবে প্রচার পায় নি।

একথা চিরন্তন সত্য যে প্রচারেই প্রসার। তাই আমি ব্যক্তিগত ভাবে ভারতীয় পৌরাণিক গল্প অবলম্বনে নরওয়েজিয়ান ও ইংরেজি ভাষায় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। উদ্দেশ্য ইউরোপিয়ানদের সাথে ভারতীয় পৌরাণিক গল্পকাহিনীর নতুন ভাবে পরিচয় করানো।
আমি মনেকরি এই সকল পৌরাণিক গল্প কাহিনী সার্বজনীন, এর স্বত্ব একক ভাবে কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা কোন রাষ্ট্র সংরক্ষণ করে না। তাই ভারতীয় পৌরাণিক গল্পকাহিনী নিয়ে কাজ করতে গেলে কারোর কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।

কোনো বিশেষ বিষয়ে ভালো কিছু করতে গেলে সেই বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান থাকা ও গবেষণা করাটা খুবই জরুরি, তাই গত এক বছর যাবৎ বিভিন্ন ভারতীয় পৌরাণিক গল্পকাহিনী নির্ভর পঞ্চাশোধিক নাটক, চলচ্চিত্র দেখেছি, সেই সাথে ত্রিশোধিক বই পড়েছি, এবং পড়ে চলছি।

সব শেষে আমি একটি গল্প  নির্বাচন করেছি এবং উক্ত গল্প অবলম্বনে কমিক বই প্রকল্পের জন্য গল্প লেখা শুরু করেছি। গল্পের বিষয়ে এই মুহূর্তে বিস্তারিত বলছি না, সময় হলে সব প্রকাশ করব।

Comments

Popular posts from this blog

আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর

Celebrating 14 Years of Toons Mag: Championing Freedom of Expression

Dive into the Colorful World of Cartoon Art: A Journey through Toons Mag Articles