পথ প্রদর্শক

আজ দুপুরে অসলো স্টেশন থেকে ক্যাম্পাস-এর দিকে রওনা দিয়েছি। দোতলা থেকে চলন্ত সিড়ি বেয়ে নিচে নামব। এমন সময় দেখলাম এক দৄষ্টি প্রতিবন্ধী সাদা ছড়ি হাতে নিয়ে হাতড়াতে হাতড়াতে সিড়ির দিকে আসছে।  
বয়েস তার ২৪ কি ২৫ হবে। ভাবলাম, দৄষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ, এমনিতে চেখে দেখে না, হয়ত চলন্ত সিড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে পরে গিয়ে ব্যথা পেতে পারে। 
তাকে দেখে আমার খুব করুণা হলো, তাই থমকে দাড়ালাম ও তার কাছে গিয়ে হাত-তা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, ''আমার হাত তা ধর, আমি তোমাকে নিচে নামতে সাহায্য করছি।'' 
সে আমার হাতটা ধরল। 
এরপর তাকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় যাবে? 
সে জবাব দিল, ''মদের দোকানে।''
সে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, তুমি কোথায় যাবে?
আমি বললাম, ক্যাম্পাসে। সামনেই, এখান থেকে একটু দুরে। 
আমরা ততক্ষণে সিড়ি বেয়ে নেমেছি। 
আমি বললাম, ঠিক আছে, আমি তোমাকে সাহায্য করছি, তোমার গন্তব্যে পৌছে দিতে। 
সে বলল, সেটা এখানেই। 
( আমি ডানে-বামে তাকালাম।  ডান পাশে একটা একটা পোস্ট অফিস, কিন্তু মদের দোকান আমার চোখে পড়ল না। )
সে বলল, এখন ৫ পা ডানে হাটলে একটা ছোট সিড়ি, সেখান থেকে ২০ পা ডানে হাটলেই মদের দোকান। 
ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম, হ্যা, তাই তো!
তার গুনে গুনে পথ চলার কথা শুনে আমি খুব অবাক হলাম। বুঝলাম দৄষ্টি প্রতিবন্ধীরা এভাবেই পথ খুঁজে পায়, এভাবেই চলা ফেরা করে। 
এই পথে এর আগে আমি অনেক হেটেছি, অথচ মদের দোকান টা আমি কখনো খেয়াল করি নি।  
যাই হোক, সে আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে তার পথে হাটতে লাগলো আর আমি আমার পথে।

Comments

Popular posts from this blog

Celebrating 14 Years of Toons Mag: Championing Freedom of Expression

ছবি আঁকতে দ্বীপে

কার্টুন প্রদর্শনীর খবর : অসলো, নরওয়ে।